আজকের পত্রিকা

ভারত কেন ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করলো, মোদির উদ্দেশ্য কী!

সাংবাদিক ও উপস্থাপিকা নবনীতা চৌধুরী তার ইউটিউব চ্যানেল “নবনীতার বয়ান”-এ ভারত কর্তৃক বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া কূটনৈতিক উত্তেজনা নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। তার মতে, এই সিদ্ধান্তের পেছনে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সাম্প্রতিক চীন সফর ও সেখানে তার বিতর্কিত মন্তব্য প্রধান ভূমিকা পালন করেছে।
২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা ভারতের স্থলপথ ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পণ্য পাঠানোর সুবিধা পাচ্ছিলেন। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশি পণ্য ভারতের বন্দর ও বিমানবন্দর ব্যবহার করে নেপাল, ভুটান, মিয়ানমারসহ অন্যান্য দেশে রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছিল। তবে, হঠাৎ করে ভারত এই সুবিধা বাতিল করায় বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা বিপাকে পড়েছেন। এখন তাদের জন্য বিকল্প পথ খুঁজে বের করতে হবে, যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প, যা ইতিমধ্যেই মার্কিন বাজারে ৫২% শুল্ক বৃদ্ধির চাপে রয়েছে, তাদের জন্য এটি একটি বড় ধাক্কা।
নবনীতা চৌধুরী তার বিশ্লেষণে উল্লেখ করেন যে, ড. ইউনুস চীন সফরে গিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে “ল্যান্ড লকড” (স্থলবেষ্টিত) বলে উল্লেখ করেন এবং চীনের জন্য এই অঞ্চলে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করার আহ্বান জানান। এছাড়াও, তিনি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীনের অংশগ্রহণ ও লালমনিরহাটে চীনা অর্থায়নে বিমানঘাঁটি নির্মাণের প্রস্তাব দেন, যা ভারতের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করে।

ভারতের বিশেষ করে আসামের মুখ্যমন্ত্রী এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানানোর দাবি জানান। তবে, এরপরও বিমস্টেক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ড. ইউনুসের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন, যা ভারতের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে প্রশ্ন তুলেছে।

এই প্রেক্ষাপটে, ভারত বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। ভারতীয় বিশ্লেষকদের মতে, এটি একটি স্পষ্ট বার্তা যে বাংলাদেশ যদি চীনের সাথে ভারতের নিরাপত্তা সংবেদনশীল অঞ্চলে সম্পৃক্ত হয়, তবে ভারত পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। ভারতীয় রপ্তানিকারকরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন, কারণ এটি তাদের জন্য পরিবহন সুবিধার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা কমাবে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়ম অনুযায়ী, স্থলবেষ্টিত দেশগুলোর জন্য পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নেপাল ও ভুটানের মতো দেশগুলো এখন অভিযোগ করতে পারে যে ভারতের এই সিদ্ধান্ত তাদের সাথে বাংলাদেশের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। তবে, ডব্লিউটিওর প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ, তাই বাংলাদেশের জন্য তাৎক্ষণিক সমাধান পাওয়া কঠিন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সরকার ও রপ্তানিকারকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। একদিকে মার্কিন বাজারে শুল্ক বৃদ্ধি, অন্যদিকে ভারতের সাথে বাণিজ্যিক সুবিধা হারানো এই দ্বিমুখী চাপ সামলাতে হলে বাংলাদেশকে দ্রুত বিকল্প রপ্তানি পথ ও কূটনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
নবনীতা চৌধুরীর মতে, ড. ইউনুসের সরকার একসময় কূটনৈতিক স্বীকৃতি নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ছিল, কিন্তু ভারতের এই সিদ্ধান্ত তাদেরকে বিব্রত করেছে। এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশ কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করে এবং ভবিষ্যতে ভারতে সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে কী পদক্ষেপ নেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button